সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৬ পূর্বাহ্ন
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি, কালের খবর :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিগত ৫ বছর পূর্বে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। অনেক পরিত্যক্ত ভবনে রয়েছে শিক্ষকদের অফিস ও অভিভাবকদের অপেক্ষাগার। পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সেসব ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। ছাদে, দেয়ালে ফাটল, খসে পড়ছে পলেস্তারা, পতন রোধ করা হয়েছে বাঁশ ঠেক দিয়ে। জানালার গ্রীলগুলোরও বেহাল দশা। হেলে পড়েছে অনেক ভবন। বৃষ্টি হলেই ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ঝড় হলে বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। শ্রেণি-কক্ষের অপ্রতুলতা আর বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এসব ভবনে পাঠদান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে বলে জানান শিক্ষকরা। কোনো কোনো স্কুলে ডাবল শিফট আর ক্লাসে পার্টিশন দিয়ে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। এসব পরিত্যক্ত ভবনসহ উপজেলার প্রায় অর্ধশত স্কুলেরও একই অবস্থা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মোট ১১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে দড়িকান্দি, বরপা, পাইস্কা বাসুন্দা, চারিতাল্লুক, নোয়াগাঁও দিঘলীয়া, উত্তর খৈসাইর, আগলা, দাউদপুর পুটিনা, হানকুর, পূর্বদাউদপুর, বইলদা, ছাতিয়ান, পশ্চিমগাঁও দক্ষিণ, নাওড়া সেলিমনগর, দক্ষিণপাড়া, ব্রাহ্মণগাঁও, ডহরগাঁও, গাবতলী, আউখাব, হিরনাল ও গোলাকান্দাইল দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২১টি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এসব ভবনকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে বিগত ২০১৩ সালেই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে স্কুলের ভবনগুলোকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কর্মসূচি না চালানোর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকেও নোটিশ দেয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। পাশাপাশি স্কুলের সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে এসব পরিত্যক্ত ভবনের পরিবর্তে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফা লিখিত চিঠিও প্রদান করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এসব স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণ করা ভবনগুলোতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। হিরনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি নতুন ভবন থাকলেও শ্রেণিকক্ষ রয়েছে মাত্র দুটি। এ কারণে পরিত্যক্ত আর মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ভবনে বাধ্য হয়ে পাঠদান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। রয়েছে স্কুলের অফিসকক্ষসহ অভিভাবকদের অপেক্ষাঘার। ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। একদিকে হেলে পড়েছে একতলা দালানটি। ছাদে-বিমেসহ দেয়ালে ফাটল ধরেছে। বাঁশের ঠেকা দিয়ে বিধ্বস্ত হওয়া থেকে রোধ করা হয়েছে। যেকোনো সময় বিল্ডিংটি ধসে পড়ে ভয়ঙ্কর ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
পাইস্কা বাসুন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সে স্কুলে একটি নতুন ভবন থাকলেও কক্ষ রয়েছে মাত্র দুটি। অপরদিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই শতাধিক। নতুন ভবনের একটিতে স্কুলের অফিসকক্ষ ও অন্যটি শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার হয়। আর ৫ বছর পূর্বে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা পুরনো ভবনে চলছে ৪টি শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম। অত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা বেগম কালের খবরকে জানান, পরিত্যক্ত ভবনে ক্লাস না নেয়ায় জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে চিঠি দিয়ে নিষেধ করা হয়েছে। একটি অস্থায়ী শেড করে ক্লাস সচল রাখার জন্য ২ লাখ টাকার বাজেটও দেয়া হয়েছে। কিন্তু শেড না উঠা পর্যন্ত পুরনো ভবনে ক্লাস না নিলে স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে বিধায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে বাচ্চাদের পরিত্যক্ত ভবনে ক্লাস নিচ্ছেন তিনি।
খৈসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম কালের খবরকে জানান, পঁচিশ বছর আগে নির্মাণ করা স্কুল ভবনটির ছাদে ফাটল দেখা দিলে ছাদ ভেঙে টিনের চালা দেয়া হয়। পাঁচ বছর আগেই বিদ্যালয়টি সরকারিভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও নতুন ভবন পাচ্ছি না। কিছুদিন আগে এলজিইডির কর্মকর্তারা মাটি পরীক্ষা করে গেছে। শ্রেণিকক্ষের অভাবে পাঠদান করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন জায়গায় দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে।
আগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ের কক্ষের ভেতরে পানি পড়ে। স্কুলের প্রাক প্রাথমিক কক্ষে অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে। চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কক্ষের অবস্থাও একই রকম। টিনের চালা চালুনির মতো জায়গায়-জায়গায় ছিদ্র। অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান জানান, টিনের চালার ভবনটি যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে। কয়েকদিন আগে টিনের চালা ভেঙে পড়েছে। তবে কেউ আহত হয়নি। ঝড় এলে পাকা ভবনের অফিস কক্ষে নিয়ে নিরাপত্তায় রাখি। পাকা ভবনের একটি অফিস, অন্যটিতে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলে।
পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সব বিদ্যালয়ের ভবনের প্রায় একই দশা। জরাজীর্ণ ভবনগুলোতে প্রতিনিয়তই ঝুঁকি বাড়ছে। এসব স্কুল ছাড়াও উপজেলার সর্বমোট ৪২টি স্কুলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে বলে স্থানীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহেদা আক্তার কালের খবরকে বলেন, উপজেলার যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন কিংবা অধিক ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে সে সব ভবনে পাঠদান কার্যক্রম না চালানোর জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। সেসব স্কুলে অস্থায়ীভাবে পাঠদান কার্যক্রম চালানোর বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪১টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের অনুমোদন হয়েছে। যতোদিন পর্যন্ত নতুন ভবন নির্মাণ না হয় ততোদিন বিকল্প শেডএ শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা হবে।